১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ব্যর্থ হয় না,
ক) ইফতারের সময় রোযাদারের দোয়া,
খ) ন্যায়বিচারক বাদশাহর দোয়া,
গ) মজলুমের দোয়া।- আহমদ।
২। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রোযা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ পর্যন্ত (মিথ্যা ও গীবত দ্বারা) তা ফেড়ে না ফেলে।- নাসাঈ।
৩। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তোমরা এমন একটি মাস পেয়েছ, যাতে এমন এক রজনী রয়েছে যা হাজার মাস থেকে উত্তম।
৪। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ক্বদরের রাত্রে জিব্রাঈল (আঃ) ফেরেশতাদের এক জামাত নিয়ে অবতীর্ণ হন এবং দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায় যারা আল্লাহর যিকির এবং বিভিন্ন এবাদতে রত থাকে, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।- রায়হাকী।
৫। হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন, রমযানের শেষ দশ দিনের বিজোড় তারিখগুলোতে তোমরা শবে ক্বদর অনুসন্ধান কর। (বোখারী, হাদিস নং ১৮৯০)
৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, এতেকাফকারী সকল পাপ থেকে মুক্ত থাকে এবং তার জন্য এত বেশী নেকী লেখা হয় যেন সে সর্বপ্রকার সৎকাজ করেছে।- মেশকাত।
৭। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যখন রমযান মাস আসে তখন আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শৃংখলিত করে দেয়া হয় শয়তানগুলোকে। (বোখারী-হাদিস নং ১৭৭৮,মুসলিম শরীফ-২৩৬২)
৮। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে, তন্মধ্যে একটির নাম রাইয়ান, রোযাদাররা ব্যতীত এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।- (বোখারী হাদিস নং ১৭৭৫)
৯। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে রমযানের রোযা রাখবে, তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করা হবে।- (বোখারী, হাদিস নং -১৭৮০)
১০। আমর ইবনুল আনাস রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আমাদের রোযা ও ইহুদী খৃষ্টানদের রোযার মধ্যে পার্থক্য হল সেহরী খাওয়া।- মুসলিম।
১১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে, কেননা তাতে বরকত রয়েছে। যদি খেজুর না পায় তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা হল পবিত্রকারী।
– আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজা।
১২। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করিয়েছে অথবা কোন গাজীকে জেহাদের সামগ্রী দান করেছে, তার জন্যও অনুরূপ সওয়াব রয়েছে।- তিরমিযী, নাসাঈ।
১৩। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং মিথ্যাচার ছাড়ে নাই, তার রোযা রেখে খানপিনা ছেড়ে দেওয়ায় আল্লাহর কোন কাজ নাই।-
(বোখারী,হাদিস নং ১৭৮২)
১৪। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে রোযা অবস্থায় ভুলে কিছু পানাহার করেছে, সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে, কেননা আল্লাহই তাকে খাইয়েছেন পান করিয়েছেন।- (বোখারী,হাদিস নং ১৮০৯)
১৫। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন রোযা আল্লাহর নিকট রোযাদারের জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে পরওয়ারদেগার, আমি দিনের বেয়ায় তাকে পানাহার ও প্রকৃত্তির কামনা বাসনা থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। অতএব সুপারিশ কবুল করা হবে।- বায়হাকী।
১৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রমযান মাসের শেষ রাতে তাঁর উম্মতকে মাফ করা হয়।- আহমদ।
১৭। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তিন জিনিস রোযাদারের রোযা নষ্ট করে না, শিঙ্গা লওয়া, অনিচ্ছাকৃত বমি এবং স্বপ্নদোষ।- তিরমিযী।
১৮। হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যদি কেউ সফরে রোযা রাখতে চাও তা হলে রাখতে পার। আর চাইলে নাও রাখতে পার।- (বোখারী, হাদিস নং ১৮১৯)
১৯। হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে মরে গেছে আর তার ফরয রোযা কাজা রয়েছে, ওলী তার পক্ষে রোযা রাখবে।-(বোখারী, হাদিস নং ১৮২৮)
২০। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে রমযানের রোযা মাথায় রেখে মৃত্যুবরণ করেছে, তার পক্ষ থকে প্রত্যক দিনের পরিবর্তে যেন একজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো হয়।- তিরমিযী।
২১। হযরত আইয়ুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রমযানের রোযা এবং পরে শাওয়ালের ছয় দিন রোযা রেখেছে, এটা তার পূর্ণ বছর রোযা রাখার সমন । – মুসলিম, হাদিস নং ২৬২৫)
২২। হযরত আবু সাঈদ খুদরী(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে আল্লাহর ওয়াস্তে একটি রোযা রাখবে, আল্লাহ তা’আলা তার চেহারা দোযখের আগুন থেকে সত্তর বছরের পথ দূরে রাখবেন।
(মুসলিম, হাদিস নং ২৫৭৮)
২৩। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোযা রাখে, আল্লাহ্ তার ও দোযখের মধ্যখানে একটি পরিখা সৃষ্টি করেন, যার এক পাড় থেকে অন্য পাড়ের দূরত্ব আসমান যমীনের মধ্যেকার দূরত্বেও সমান।
তিরমিযী।
২৪। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, প্রত্যেক জিনিসের যাকাত রয়েছে এবং শরীরের যাকাত হল রোযা।
ইবনে মাজা।
২৫। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রোযা সবরের অর্ধেক এবং সবর ইসলামের অর্ধেক।
২৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, শবে কদর তালাশ করবে রমযানের নয় রাত অথবা সাত রাত বাকি থাকতে। অথবা পাঁচ রাত বাকি থাকতে, অথবা, তিন রাত বাকি থাকতে।- তিরমিযী।
২৭। হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর নিকট জিজ্ঞাসা করেন, যদি আমি বুঝতে পারি, শবে কদর কোন তারিখে, তখন আমি কি করব? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তুমি বলবে, ইয়া আল্লাহ, তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা ভালবাস, অতএব আমাকে ক্ষমা কর।- আহমদ ইবনে মাজা, তিরমিযী।
২৮। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রমযান মাসের রোযা ওমরা হজ্জের সমান।- বোখারী, মুসলিম।
২৯। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমযানের রাতে তার বিশেষ (তারাবীহ) নামায ঈমানী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সওয়াবের আশায় আদায় করবে,তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে।-(বোখার, হাদিস নং ১৮৮৩)
৩০নং হাদিস থেকে ৫০ নং হাদিস বোখারী শরিফ হতে উদ্বৃত
৩০। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন আমি হযরত নবী করীম (স)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা রমযানের চাঁদ দেখলে রোযা রাখ এবং শাওয়ালের চাঁদ দেখলে ইফতার কর। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তা হলে (ত্রিশ দিন) হিসাব কর। (বোখারী, হাদিস নং ১৭৭৯)
৩১। হযরত আবূ হোরায়ারা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, যে ঈমান ও বিশ্বাস সহকারে সওয়াবের আশায় শবে কদরে নামায পড়বে এবং রমযানের রোযা রাখবে, তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বোখারী, হাদিস নং ১৮৮৭)
৩২। হযরত আবূ বাকরা (রা) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিনা করেন, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, এমন দু’টি মাস আছে যার উভয়টিই ঘাটতি অর্থাৎ উনত্রিশ দিনে হয় না। আর তা হল ঈদের দু’টি মাস রমযান ও যিলহজ্জ। -(বোখারী, হাদিস নং ১৭৯১)
৩৩। হযরত আবূ হোরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, তোমাদের কেউ রমযানের একদিন বা দু’দিন পূর্বে রোযা রাখবে না। তবে কেউ প্রতিমাসে এ তারিখে রোযা রাখতে অভ্যস্ত হলে তবে রাখতে পার। -(বোখারী, হাদিস নং ১৭৯৩)
৩৪। হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বাড়ীতে পরিবার-পরিজনের সাথে সেহরী খেতাম। সেহরী খাওয়ার পর হযরত নবী করীম (সাঃ) এর সাথে ফজরের নামায পড়ার জন্য তাড়াহুড়া করে খেতাম। -(বোখারী, হাদিস নং ১৭৯৮)
৩৫। হযরত যায়িদ বিন সাবেত (রা) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন আমরা হযরত নবী করীম (স)- এর সাথে সেহরী খেয়েছি। তারপর তিনি নামায পড়তে দাঁড়িয়েছেন। বর্ননাকারী বলেন, আমি যায়েদ ইবনে সাবেত (রা)-কে জিজ্ঞেস করলাম, সেহরী ও আযানের মাঝখানে কত সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত পাঠ করার মত সময়ের ব্যবধান ছিল। -(বোখারী, হাদিস নং ১৭৯৯)
৩৬। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, তোমরা সেহরী খাও। কেননা সেহরী খাওয়ায় বরকত লাভ হয়। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮০১)
৩৭। হযরত আবূ হোরায়ারা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, রোযাদার যদি ভূল করে কিছু খায় বা পান করে, তা হলে সে যেন রোযা পূর্ন করে। কেননা আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছায় সে পানাহার করেছেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮০৯)
৩৮। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (সাঃ) এহ্রাম এবং রোযা অবস্থায়ও শিংগা লাগিয়েছেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮১৪)
৩৯। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, এটা কি ঠিক নয় যে, হায়েয শুরু হলে মেয়েরা নামায পড়তে বা রোযা রাখতে পারে? আর এও তাদের দ্বীনের কমতি বা লোকসান। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮২৭)
৪০। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, মৃত ব্যক্তির উপর রোযার কাযা থাকলে মৃতের ওয়ারিশগণ তার পক্ষ থেকে তা আদয় করবে। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮২৮)
৪১। হযরত আবূ হোরায়ারা (রা) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত নবী করীম (সাঃ) আমাকে তিনটি বিষয়ের অসিয়ত করে গেছেন। (১)আমি যেন প্রতি মাসে (১৩, ১৪, ১৫ তারিখে) তিনটি রোযা রাখি, (২) চাশতের সময় দু’রাকআত নামায আদায় করি, (৩) রাত্রে নিদ্রা খাওয়ার আগেই যেন বেতেরের নামায আদায় করি। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮৫৭)
৪২। হযরত আবূ হোরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত রাসূলুল্লাহ (স)- কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ যেন কখনও শুধু জুমআর দিন একটি রোযা না রাখে। আর রাখলে ও ঐ জুমআর আগের কিংবা পরের দিনও যেন আরেকটি রোযা রেখে দুইটি রোজা করে। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮৬২)
৪৩। হযরত আলকামা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা)- কে জিজ্ঞেস করলাম, হযরত নবী করীম (স) রোযার জন্য কোন বিশেষ দিন নির্দিষ্ট করতেন কি? তিনি বললেন না। তাঁর আমল ছিল স্থায়ী। হযরত নবী করীম (স)- এর মত শক্তি সামর্থ রাখে তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে? -(বোখারী, হাদিস নং ১৮৬৪)
৪৪। হযরত হেশাম বিন ওরওয়া (রা) কর্তৃক বর্ণিত, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) মিনায় অবস্থানের দিনগুলোতে রোযা রাখতেন এবং ওরওয়াও এ দিনগুলোতে রোযা রাখতেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১২৫০)