সদর উপজেলায় ফতুল্লা থানার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ এখন দুর্নীতির আখরা। অনিয়ম-দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্য লেনদেনের মধ্যই চলছে এই কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ। সরজমিন পরিদর্শনে ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতি ও অনিয়মের এমন চিত্র উঠে এসেছে এই ইউনিয়ন পরিষদটিতে। সাধারন মানুষ জিম্মি হয়ে আছে এই ইউনিয়ন পরিষদের পিয়ন থেকে শুরু করে সচিবের কাছে। কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদে একটি নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে ফি লাগে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। পিতা মাতার অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন না থাকলে তা করতে ফি লাগে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। নাগরিক পরিচয়পত্র করতে জন প্রতি লাগে ১০০ টাকা ও প্রত্যয়নপত্র করার জন্য লাগে ১০০ টাকা।
গ্রাম পুলিশ প্রশান্ত জন্ম নিবন্ধন করতে আসা মরিয়ম আক্তারকে বলেন, আপনার বাড়ির হোল্ডিং নাম্বারসহ খাজনা পরিষদের রশিদ, ডাক্তারি সনদ, বাবা-মার জন্ম নিবন্ধন কপি নিয়ে আসুন। এ সময় মরিয়ম আক্তার তার অভিভাবকের সাথে প্রশান্তর মোবাইলে কথা বলিয়ে দেন। অভিভাবকে প্রশান্ত জানান, আমাদের নির্ধারিত ফি বাংলা জন্ম নিবন্ধন করতে লাগবে ২০০ আর ইংরেজি জন্ম নিবন্ধন করতে লাগবে ২০০ টাকা। অভিভাবক টাকার পরিমাণ এতো কেন তা জানতে চাইলে প্রশান্ত বলেন, এটা আমাদের নির্ধারিত ফি, সব জায়গায় একই, কাগজ, কালি, স্টাফ বেতন কিন্তু সরকার দেয় না, এর চেয়ে বেশি জানতে চাইলে আমাদের উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলুন বলে ফোন কেটে দেয়। যাহার সমস্ত কথোপকথন রেকর্ড জেডটিভি অনলাইন অফিসে জমা রয়েছে। জন্ম নিবন্ধন ওয়েবসাইডে উল্লেখ রয়েছে কি কি ডকুমেন্ট থাকলে আবেদনকারী আবেদন করার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। সে অনুযায়ী একজন আবেদনকারী ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আবেদনটি করে থাকেন। আবেদনপত্রে কোনো ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করতে ব্যর্থ হলে আবেদনটি সার্ভার অযোগ্য বলে বিবেচিত করেন। তাহলে সমস্ত কাগজপত্র যথাযথভাবে আপলোড করে একজন আবেদনকারী যখন আবেদনটি করেন তারপরও ইউনিয়ন পরিষদ কেন বিভিন্ন তালবাহানা স্বরুপ আরও বিভিন্ন কাগজপত্র চেয়ে সাধারণ জনগনকে হয়রানি করেন ও ঝামেলায় ফেলেন। এতে করে সাধারণ জনগনের অনেক মূল্যবান সময় অযথা নষ্ট হচ্ছে। তাহলে কি টাকার পরিমান বাড়ানোর জন্য তাদের এই তালবাহানা? কিন্তু কেন?
জন্ম নিবন্ধন করতে আসা মিম নামে একজন জানান, আমি এবার নতুন ভোটার হবো, তাই আমার বাবা-মায়ের অনলাইন কপি জন্ম নিবন্ধন লাগবে। এখানে আমার বাবা-মা ও আমার জন্ম নিবন্ধন করতে ১০০০ টাকা ফি চাইছে তারা, আমি কম দিবো বললে তারা ২০০ টাকা কম দিয়ে ৮০০ টাকা চাইছে। কিন্তু গত জানুয়ারী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছিলেন সরকারি ফি ছাড়া যদি কেউ জন্ম নিবন্ধনে অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন তাহলে তথ্য পেলে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশ কেউর চাকুরি থাকবে না। নতুন জন্ম নিবন্ধন ফি হচ্ছে ৫০ টাকা। জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি হচ্ছে ১০০ টাকা। নাম পিতা-মাতার নাম সংশোধন ফি হচ্ছে ৫০ টাকা। এমন ঘোষণা দেওয়ার পরও কেন এমন দূর্নীতি হচ্ছে তা জানতে চান কাশিপুর ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ। কাশিপুর ইউনিয়নে পরিচয়পত্র ও প্রত্যয়ন পত্র করতে আসা আলিফ হোসেন নামে একজন জানান, আমার দুই ছেলে-মেয়ের পরিচয়পত্র ও প্রত্যয়ন পত্র করতে আসছি, দুইটা করার জন্য সচিবের কাছে ১০০ টাকা করে ৪০০ টাকা দিয়েছি।
এ বিষয়ে কাশিপুর ইউনিয়নের একজন নাগরিক জানান, দিন যতোই যাচ্ছে ততোই এখানে দুর্নীতি বাড়ছে। আমরা সাইফ উল্লাহ বাদলকে নির্বাচনে পাশ করিয়েছি আমাদের সেবা করার জন্য। কিন্তু সে ঠিক মতো ইউনিয়ন পরিষদে আসেন না, বাসায় বসে সে সাক্ষর করেন। যে চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদে থাকে না সে ইউনিয়নে তো দুর্নীতি হবেই। ইউনিয়ন পরিষদে আশা একজন আবেদনকারী আল-আমিন জেড টিভিকে জানান আবেদনপত্র জমা দিয়ে গিয়েছি এক সপ্তাহ আগে আজ ইউনিয়ন পরিষদের কর্তৃপক্ষ জানালেন আমার আইডি কার্ড ব্যবহার করে কে বা কাহারা আবেদন করে রেখেছে। তাই এই আবেদন হবে না আপনি কোর্ট এ জান ওখানে গিয়ে এ্যাফিডেবিট করে উপজেলা থেকে জন্ম নিবন্ধন ঠিক করে আনুন। এই আবেদনকারী ক্ষোভে দুঃখে জেড টিভিকে জানান আমার আইডি কার্ডের নাম্বার ব্যবহার করে কে বা কাহারা আবেদন করেছে তাতে আমার কী দোষ। আমি কেন এর দায়-ভার বহন করব।
আরেকজন ভুক্তভোগী জানান, আমার জেলা কুমিল্লা, আমি আবেদন করেছি অনলাইনে, অনলাইনে আবেদন করার সময় আমাকে জিজ্ঞেস কথা হয়েছিল বা ওয়েব সাইডে রয়েছে যে, জন্ম নিবন্ধন সনদ আপনার কোন ঠিকানার অফিস হতে সংগ্রহ করতে চান? * জন্মস্থান * স্থায়ী ঠিকানা * বর্তমান ঠিকানা এখানে তিনটি অপশন রেখেছে জন্ম নিবন্ধন অধিদপ্তর আমি চাইলে যে কোন স্থান থেকে জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করতে পারবো। তাহলে কেন এই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমি জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করতে পারছি না, আমাকে কুমিল্লা গিয়েই সংগ্রহ করতে হচ্ছে? আবার টাকা দিলেই কুমিল্লার হয়েও আমি এই ইউনিয়ন হতে সংগ্রহ করতে পারবো। এ কেমন দূর্নীতি। আমার বোধগম্য হয় না।
সরজমিনে এমন চিত্র দেখা গেলে কাশিপুর ইউনিয়নের পরিষদের সচিব বাহাউদ্দিন বলেন, এসব ফি লাগে, সবার কাছ থেকেই নেই। আমাদের যে স্টাফ আছে তাদের কোন বেতন নাই তাই আমরা এই টাকা নেই।
এ বিষয়ে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. সাইফ উল্লাহ বাদল টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন এটা মিথ্যা কথা, আমি সচিবকে জিজ্ঞাসা করব। এ বিষয়ে নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ রিফাত ফেরদৌস বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত না, অভিযোগ পেলে আমরা জেলা প্রসাসকের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবো।